মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় দফায় বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার পেলেন ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন পরিবার।

রোববার (২০ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘করোনার কারণে আমি যেহেতু যেতে পারিনি। আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি এবং ইউএনও জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন।’ দেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন ছিন্নমূল এসব পরিবার।

দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে। সেমিপাকা এসব ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে।

এ ছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে ওইসব পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তারই অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ি ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ গৃহ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় বরিশাল, ভোলা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম ও রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হতদরিদ্র পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো। এ ছাড়া গত বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন। তারও আগে জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে বহুতল ভবনে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘একসঙ্গে এত মানুষকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল।’ তিনি মনে করেন, আশ্রয়ণে ছিন্নমূল বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী স্থায়ী আবাসনের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাচ্ছে।

এতে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে দেশের সব মানুষের জন্য স্থায়ী আবাসনের বন্দোবস্ত করবে সরকার।